বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন
মোংলা প্রতিনিধি: মোংলায় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি অনুদান ও ত্রান বন্টনে নানা অনিয়ম এবং স্বোচ্ছাচারিতা সহ অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একের পর এক তার এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদে ক্রমেই ফুঁসে উঠছেন গ্রামের নিরীহ মানুষ। এ বিষয় প্রতিকার চেয়ে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের দপ্তরে গনস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য এম নুরুল আমীন শেখ ২০১৬ সাল থেকে দায়িত্ব গ্রহনের পর নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। প্রাকৃতিক নানা দূর্যোগকালীন অবস্থায় সরকারি অর্থ অনুদান, ত্রান তৎপরতা, এলাকার দারিদ্র বিমোচনে উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডকে ঘিরে ভাগ্য বদলেছে তার। সদ্য কারোনাকালীন প্রধানমন্ত্রী ২৫০০ টাকার অর্থ সহায়তায় গ্রামের নিরীহ মানুষের কাছ থেকে ভাগ বন্টন, আবার নিজের ওয়ার্ডের অসহায় মানুষকে বঞ্চিত করে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অন্য ওর্য়াডের বাসিন্দাদের প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ড,বয়স্ক ভাতা,বিধবা ভাতা,প্রতিবন্ধি ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, সরকারি ঘর, পানির ট্যাংক জেলে কার্ড, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রকারের ত্রান বিতরন সহ এলাকার রাস্তাঘাট এবং উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার এ সকল কার্যকলাপের কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি সহ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। এমনকি সরকারি সাহায্য সযোগিতা থেকেও বঞ্চিত করা হয় তাদের। এমন বিস্তার অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্য এম নুরুল আমীন শেখের বিরুদ্ধে। সুন্দরবন ইউনিয়নের ওই ওর্য়াডের আওতাধিন ৫টি গ্রামের মানুষ এখন অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছার হয়ে উঠছেন। এ প্রসঙ্গে দেয়ারীজারা গ্রামের বৃদ্ধ অনন্ত মন্ডল জানান, তার বয়স্ক ভাতার বই আটকে রেখে দুই দফায় ৬ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। একই গ্রামের বুলবুল শেখ বলেন, বছর দুয়েক আগে তার নামে একটি জেলে কার্ড বরাদ্ধ হলেও উৎকোচ দিতে ইউপি সদস্য তার সেই কার্ডটি বাতিল করে। ঢালীর খন্ড গ্রামের বৃদ্ধ জেলে হাবিবুর রহমান শেখ জানান, দু’ বছর আগে তার কাছ থেকে ২৫০০ টাকা অগ্রিম গ্রহন করলেও বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া হয়নি। এ গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা মোমেনা বেগম (৬০) জানান, বয়স্ক ভাতার জন্য ইউপি সদস্যের পেছনে ৩ বছর ধরে ঘুরছেন। উৎকোচের অগ্রিম সাড়ে ৩ হাজার টাকাও দিয়েছেন। কবে পাবেন বয়স্ক ভাতার কার্ড তা জানা নেই। একই এলাকার প্রতিবন্ধি শিশু সুমার আশ্রিত মা আলেয়া বেগম কয়েক দফায় ছুটেছেন অনাথ এ শিশুর জন্য সরকারি ভাতা আর একটু অনুদানের জন্য তাও মেলেনি। তাই এখন আর ছুটাছুটি করনে না ইউপি সদস্যের পেছনে। আগা মাদুর পাল্টা গ্রামের শংকর মন্ডল ও সোনালী মন্ডল দম্পত্তি জানান, মাতৃত্বকালীন সরকারি সহায়তা প্রদানের কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা নেয়া হয়। ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় ওই গ্রামের মোজাম্মেল হাওলাদার পাইনি সরকারি পানির ঢ্যাংক। গ্রামের রাস্তার পরিছন্ন কর্মীতে নাম লেখাতে হলে ৫শ’ ইউপি সদস্যকে টাকা দিতে বলে জানান মাদুরপালটা গ্রামের বৃদ্ধ আসাদ শেখ। তেগরিয়া গ্রামের আব্দুল গনি সরদারের জমি বিক্রির ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন নিজ ওয়ার্ডের ওই ইউপি সদস্য। খাসপাড়া আদর্শ গ্রামের মোনজাত উদ্দিন ফকিরের কাছ থেকে সরকারি ঘর দেয়ার কথা বলে ২০১৬ সালে ৬ হাজার টাকা উৎকোচ নেয়া হয়। ঘর না পেয়ে ২০১৮ সালের ১৬ আগষ্ট উৎকোচের টাকা ফেরৎ পেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু উৎকোচ প্রদানের প্রমান দিতে না পারায় আজঅবদি ঘর তো দূরের কথা টাকাও ফেরৎ নিতে পারেননি তিনি। শুধু তাই নয় ওই ইউপি সদস্যের আক্রশের কারনে সেই থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ও ত্রানের ছিটেফোটাও তার পরিবারের ভাগ্যে জোটেনি। এ ছাড়া সরকারি রাস্তার ইট তার বাড়ির ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন ইউপি সদস্য। তার নানা অনিয়ম ও কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা।
তবে এ বিষয় সুন্দরবন ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এম নুরুল আমীন শেখ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। সকল বিষয় স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছেন । তবে একটি কুচক্রি মহল তাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যহত করার চক্রান্ত চালাচ্ছে। এ দিকে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান কবির উদ্দিন জানান, পরিষদের ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে কমবেশি অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। তবে অনেক বিষয় নিয়ে চক্রান্ত ও মিথ্য অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবী করেন ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শেখ কবির উদ্দিন।